শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
পিরোজপুর শিক্ষককে হাতুড়িপেটা, বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার কাউখালীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে জনসচেতনতা ও প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা পিরোজপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন নেছারাবাদে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লোহার পুল ও প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মঠবাড়িয়ায় ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর লাশ, স্বামী ও শ্বশুর আটক পিরোজপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা কাউখালীতে মন্ডপগুলোতে চলছে দুর্গা পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান নেছারাবাদে ২৬ জন শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা পিরোজপুরে পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল ভান্ডারিয়ায় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নদীতে জাল ফেলছে জেলেরা! মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ পিরোজপুর ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এর কমিটি গঠন: সোহাগ সভাপতি, মিঠু সম্পাদক কাউখালীতে অপহরণের তিন মাস পর সপ্তম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী উদ্ধার কাউখালীতে জেলের মরদেহ উদ্ধার ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারীকে প্রাণ নাশের হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দিন কামিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণীর প্রথম ক্লাস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা ভাণ্ডারিয়ার চাঞ্চল্যকর আসমা হত্যার বিচার দাবিতে পিরোজপুরে মানববন্ধন কাউখালীতে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত মঠবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে গ্রেফতার
‘ডিসি অফিসে নিয়ে সাংবাদিক আরিফকে চোখ বেঁধে উলঙ্গ করে পেটানো হয়’

‘ডিসি অফিসে নিয়ে সাংবাদিক আরিফকে চোখ বেঁধে উলঙ্গ করে পেটানো হয়’

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের ওপর প্রতিশোধ নিতেই আইন বহির্ভূতভাবে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তাকে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মধ্যরাতে আদৌ কোনও কার্যক্রম চালানো যায় কিনা প্রশ্ন তুলে আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যাদের হাতে আইন সুরক্ষিত থাকার কথা তারাই সেটির অপপ্রয়োগ করেছেন। ঘটনা বিশ্লেষণে মনে হয় না, যারা সাংবাদিক আরিফুলকে নির্যাতন করেছেন তারা আইন না জেনে করেছেন।

গত বছরের ১৯ মে ‘কাবিখা’র টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসি’র নামে নামকরণ!’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে একটি সংবাদ প্রকাশ হওয়া এবং সম্প্রতি আরও কিছু অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখায় বেশ কয়েকবার তাকে ডিসি অফিসে ডেকে নেওয়া হয়।

এদিকে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন তার ওপর আসা অভিযোগের বিপরীতে বলছেন, তার সেই প্রতিবেদন একবছর আগের। সেটা এখন কেন? যদিও তিনি মধ্যরাতে ধরে এনে সাজা দেওয়াকে ‘আইন মেনেই করা’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বশেষ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজার ঘটনা সামনে এনে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জনগণের খেদমতকারী, সেবাপ্রদানকারী যখন জনগণের ওপর চড়াও হয়, তখন রাষ্ট্রের চরিত্র বুঝতে বাকি থাকে না। ডিসি সাহেব যেটা করলেন প্রতিশোধস্পৃহা কেবল নয়, জনগণকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে। সমাজের প্রতিচ্ছবি যারা তৈরি করেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে দেখার চেষ্টা করেন সেই সাংবাদিককে যখন বেআইনিভাবে রাত দুটোয়, পরিবারে অন্য কোনও পুরুষ মানুষের অনুপস্থিতিতে, প্রতিবেশীকে সাক্ষী না করে জেলা প্রশাসকের অফিসে তুলে আনা হয় তখন এর মধ্য দিয়ে ডিসি জনগণকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এটা প্রমাণিত। এটি জনগণের প্রতি তার হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ। কেবল তদন্ত নয়, ডিসিকে সরিয়ে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাকে পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু তদন্ত করা অসম্ভব। অ্যাডমিন ক্যাডারের সদস্যরা একজোট থাকেন, তারা নিজেদের ত্রুটি খুঁজে পান না। তারপরও এক্ষেত্রে আমরা সুষ্ঠু বিচার দেখতে চাই।

প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে ঘটনা
আরিফের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু ১৩ তারিখ দিবাগত রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুক্রবার (১৩ মার্চ) রাতের খাওয়া শেষে আমরা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় দরজায় আঘাত। কারা দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে বুঝতে না পেরে আরিফ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে ফোন দেন। থানা থেকে ওসি বলেন, তারা কাউকে পাঠাননি। এরপরই দরজা ভেঙে ৭/৮ জন লোক ঢুকে ‘তুই খুব জ্বালাচ্ছিস’ বলে পেটাতে থাকে। এরপর তাকে নিয়ে চলে যায়। ভেতরে-বাইরে মিলে ২০-৩০ জন ছিল। পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন, আরিফুলকে এক বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে কুড়িগ্রাম কারাগারে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে যান নিতু। সেখানে আরিফুল ইসলাম তার স্ত্রীকে জানান, মধ্যরাতে তাকে বাসা থেকে জোর করে আনার পথে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত লাথি-থাপ্পর, ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তার দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর প্যান্ট ও গেঞ্জি খুলে তাকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এসব দৃশ্য ভিডিও করা হয় বলে জানিয়েছেন আরিফুল। তিনি আরও জানান, যারা তাকে নির্যাতন করেছে, তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তাদের দেখতে না পারলেও তাদের সবার গলার স্বর তার মনে আছে।

কী আছে আইনে
ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) হলো একটি সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি। এই আদালতে বিচারক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার বিচারিক এখতিয়ার অনুযায়ী উপস্থিত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে দোষীকে দণ্ড দিয়ে থাকেন।

জানতে চাইলে এ আইনের বিষয়ে আইনজীবী হাসান এমএস আজিম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে আইনের ৭ ধারায় বলা আছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গৃহীত হওয়ার পরপরই আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিপ্ত অভিযোগ লিখিতভাবে গঠন করে তা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করে শোনাবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি গঠিত অভিযোগ স্বীকার করেন কিনা তা জানতে চাইবেন। অভিযুক্ত স্বীকার না করলে তিনি কেন স্বীকার করেননি তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে চাইবেন। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করলে তার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করে অভিযুক্তের স্বাক্ষর নিতে হবে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনায় যথোপযুক্ত দণ্ড আরোপ করে লিখিত আদেশ দেবেন।

আরিফুল হক এর স্ত্রীর বিবরণী অনুযায়ী আরিফকে মারতে মারতে জেলা প্রশাসকের অফিসে নেওয়ার আগে পর্যন্ত আইনে উল্লেখিত নির্দেশনার কোনোটিই মানা হয়নি। আইনজীবী হাসান আজিম আরও বলেন, ‘আইনত যেখানে অপরাধীকে পাওয়া যাবে সেখানেই সাজা দিতে হয়। কিন্তু বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে যদি ডিসি অফিসে সাজা দেওয়া হয় তাহলে তা অবৈধ হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচার মানে তাৎক্ষণিক অপরাধের স্থানেই বিচার দিতে হয়।’

গভীর রাতে পুলিশ এভাবে কাউকে ধরে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারে কিনা প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোথাও যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত রাতের বেলা পরিচালনা করতে পারে না। কোথাও ঘরের দরজা ভেঙেও ঢুকতে পারবেন না। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত চাইলে সিলগালা করে দিয়ে আসতে পারেন।

বাসা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) সাজা দিতে পারেন না উল্লেখ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেটা শোনা যাচ্ছে সেই ডিসি সম্পর্কে কোনও রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর যদি এ ধরনের সাজা প্রদানের ঘটনা ঘটে থাকে, তবে এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ থাকে যে, এ ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।

 

সুত্র বাংলা ট্রিবিউন

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন










© All rights reserved © 2025 pirojpursomoy.com
Design By Rana